লকডাউনের দিনগুলো
১৬
চাকরি বাকরি হারিয়ে
ঘরের দরজা জানালা বন্ধ করে বসে আছি
আর একটা শকুন মাথার উপর ঘুরে বেড়াচ্ছে সারাক্ষণ
১৭
পাশের বাড়ির মনোজ'দার
বারো বছরের ছেলে, সকাল থেকে সারা পাড়া মাথায় করে রেখেছে
তার পোষা পাখি ময়না উড়ে গেছে বলে
সে হয়তো এখনো বুঝেনি জীবন মানে সংগ্রাম
১৮
সাঁঝবেলা মনোজ'দার বৌ
সুজতাদি প্রদীপ হাতে পাড়ার মন্দিরে আসে
আর আমার চোখে অপ্সরা হয়ে ওঠে
১৯
এই অসময়ে বড়জোর রেল ফাটক অব্দি হেঁটে যায়
তারচেয়ে বেশি হলে দামোদর নদী
নদীর পাড়ে বসে দেখি সহস্র ঢেউ এর উপর দুমড়ে মুচড়ে পার
হচ্ছে আমার প্রতিচ্ছবি
২০
খালি পায়ে হাঁটলে পা কেঁটে যায়
কিংবা কাঁটা ফুটে ওঠে
তারা জানে না এই পা জীবন পথে একমাত্র চলার সাথী
২১
রাত হলে মনে হয় সূর্যের কোন অহংকার নেই
২২
পাঁচিল টপকে প্রেমিকার রুমে ঢুকতেই
সে আমায় দস্যু ভেবে
অন্য রুমে ছুটে গেলো
২৩
অন্ধকারে একা রাস্তা পার হতেই দেখি
গোপন শিরায় শিরায় পাখি কেঁদে ওঠে
২৪
তুমি কথা দেওয়া কথা খুন করতে ভালো পারো
আমার বাবাও একবার চিতাবাঘ মেরে
সুন্দরবন ঘুরিয়ে এনেছিল
২৫
অসময়ে কবিদের জীবনী নিয়ে ভাবি
শীতকালও এসেছে
সুতরাং সুপর্ণা আমার শুধু আমার প্রেমিকা হতে পারতো
আমি যদি ভাস্কর চক্রবর্তীর জায়গায়
"শীতকাল কবে আসবে সুপর্ণা" লিখে রাখতাম বছর
খানে আগে
২৬
আমি আর আমার পাঁচজন বন্ধু
ঠোঁটে সিগারেট নিয়ে হেঁটে যাচ্ছি হঠাত্
প্রাইমারি স্কুলের প্রতিমা দিদিমণির সাথে দেখা
সিগারেট লুকিয়ে ম্যাডামের পা ছুঁয়ে চোখের দিকে তাকাতে
গিয়ে দেখি
ভেঙে গেছে স্বপ্নের সাম্রাজ্য
২৭
দিদিমণি চশমায় আঙুল ছুঁয়ে বললো
নদীর গতিপথ ছিল তীব্র
আমার শক্ত গাঁথুনি ক্ষয়ে যাবে ভাবিনি
২৮
রামু কাকার দুটো পা চলে গেছে
তার ছেলের সাড়ে সতেরো বছর বয়স
সে পাটিগণিতের পিতা পুত্রের অঙ্ক ভুল করেছিল বলে
সে আজ হয়ে উঠেছে পিতা আর তার বাবা পুত্র
২৯
আজ ভাই বাবার পকেট থেকে
খুচরো পয়সা বার করে হাপপ্লেট বিরিয়ানি নিয়ে এসেছে
সে হয়তো জানে না বাঘ আর গরু এক ঘাটে জল খাই না
৩০
এবার মাঠের অনেক ধান নষ্ট হয়ে গেছে
বাবার চোখে সকাল বিকেল ভেসে ওঠছে
কাল সকালে কি রান্না হবে
৩১
আজ ৪ নভেম্বর ২০২০ বুধবার
আমার সকাল থেকে জ্বর আর বমিতে
অন্ধকার হয়ে আসছে ঘর,বাড়ি,পথ,ঘাট
৩২
চোখ মুখ সর্বাঙ্গ পুড়ে যাচ্ছে
তোমার কথার সম্মোহন জানে -
এই জ্বরের উত্তাপও হার মেনে যায় তোমার দেওয়া ক্ষতের
কাছে
৩৩
জ্বর আজও যায়নি
তুমি কথা বলছ
আমি চুপ আছি
তুমি বলছ, আমি চুপ আছি
আর ঠিক এইভাবে আমাদের সম্পর্ক মিশে যাচ্ছে অতলের গভীরে
৩৪
আজ সকালে কলেজের বই গুলো খুলে দেখি
প্রতিটি পাতায় আমার বাবার বুকে ছোবল মারছে উইপোকা
৩৫
এই মুহূর্তে "ঘরের বাইরে ঘর" "তুষারকান্তি
মাহাতো" বই এর
"কবিরা শুধুই ক্ষণিকের ভালো লাগা । এদের নিয়ে
ভবিষ্যত্ ভাবনা অচল"
এই লইনটি পড়ছি আর ভাবছি
হঠাত্ তুষারকান্তি মাহাতোর ফোন, ম্যাজিকেল তাই না
৩৬
আজ মাইগ্রেনের যন্ত্রণায় মুখ নাক মাথার চুল পর্যন্ত
ছিঁড়ে ফেলেছি
এই অসুখ জানে না মস্তিষ্কের শিরায় শিরায় না লেখা অনেক
ভাবনার বীজ জমে আছে
৩৭
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী
রোজ
রোজ আর এই এক কাজ করতে ভাল্লাগেনা
৩৮
হঠাৎ ঘুমিয়ে পড়তেই স্বপ্নে ভেসে
আসছে
লম্বা চুল, দাড়ি, ছেঁড়া জামা পরা অনেকগুলো লোক.....
আর তাঁর সন্ত্রাসের বুকে চাবুক মেরে ঘুরে বেড়াচ্ছে
৩৯
এককেসময় দূরের আকাশ, সবুজ ঘাস, বন্ধ হয়ে যাওয়া কলেজ,
কলেজের বন্ধু, রেলপথ, ভিড় কমে যাওয়া বাজার বলে আয় । আয় আমার কাছে আয়
৪০
বাবা খবরের কাজ পড়ে শোনাচ্ছে এবার পশ্চিমবঙ্গে কোভিডে
মৃত্যুর হার দ্রুত হারে বেড়ে চলেছে
তা শুনে মা বলছে আমরা সকলেই দুদিনের টুরিস্ট
৪১
ভাই মোবাইলে গেম খেলছে আর তার বন্দুকের নলের ডগায় বসে
আছে একটি পাখি
হঠাত্ সেই মুহূর্তে দুজনের মাঝখান থেকে একটি পাখি গান
করতে করতে উড়ে গেলো
সে বলছে ভয়ে মরার চেয়ে গান গাওয়া অনেক ভালো
৪২
গ্রামে অনেকর বাড়িতেই
"নুন আনতে পান্তা ফুরায়" এর মতো অবস্থা
কেউ
কেউ এর নাম দিচ্ছে দুঃস্বপ্ন কেউ বা সংগ্রাম
৪৩
আমার মা তিন বেলা শ্রীলক্ষ্মীর আরাধনা করে
ধূপধুনো দেয়
আর আমার খালি মনে হচ্ছে এই ধোঁয়ার কারণে হয়তো দেবীর
চোখ বন্ধ হয়ে
থাকে সারাক্ষণ
৪৪
"যে যায় যাক" এই ভেবে আমি ঘুমিয়ে পড়েছিলাম
এবং ঘুম থেকে উঠে দেখি কেউ নেই পাশে
৪৫
এই অসময়ে আবার বুক ভারী হয়ে উঠছে আর তোমার দেওয়া ব্যথায়
পুনরায় ভিজে যাচ্ছি
বাহ্ দারুণ
ReplyDeleteলকডাউনের দিনগুলো লিখে রাখা দরকার ছিল।
ReplyDeleteখুব সুন্দর হয়েছে লেখা গুলো