শচীদুলাল বিশ্বাস
(১৯৫২ – ২০১৫)
বাবা: শ্রীশচন্দ্র বিশ্বাস, মা:
জ্ঞানদা বিশ্বাস
সম্পাদিত পত্রিকা: আয়োজন, সংরূপ,
সমকালীন
কবিতার বই: ছ নম্বর ম্যাজিক
(১৯৯৮)
দরজা খোলার গন্ধ
(২০০৭)
পাতাবাহার (২০১২)
অবিকল
অবিকল
কল্ কল্ শব্দে
ঝরে যাচ্ছে
স্মৃতি
কুয়াশা
আজ আবার কুয়াশা এল
এল ঘুমপাড়ানি রোদ
এল মাঘ শীত
এল পৌষালী শুষ্কতা
বন বাসরে
সে
এতদিন অপেক্ষায় ছিল
আজ আবার কুয়াশা এল
ব্যথা
কতদিন তোমার সঙ্গে দেখা হয়নি
অন্ধকার কানামাছি খেলছে
কবিতা লুকিয়ে রাখছে চিঠি
খিদে তো ছিল
ছিল উপবাস
বুকের ব্যথা নিয়ে ছিল হাসি-মস্করা
পাতাবাহার
ফুলের অছিলায়
পাতাবাহারের রঙিন জামা
ছবির ছায়ামাখানো প্রতিলিপি
মাখছে আতর
দোটানায় আমি।
শহিদ নগর
শহিদ নগরের পাশ দিয়ে
বাস চলে
গেল
সে যাক
এ রকম কত শহিদ নগরের পাশ দিয়ে
বাস চলে
যায়
বাসেরা যায়
যাত্রী বসে
থাকে ঘুমোয়
দাঁতে নখ কাটে পরনিন্দা পরচর্চায়
মশগুল
তবে এ কথা ঠিক
মাইপোশ হাতে
শহিদ হয়েছিল
ছ নম্বর ম্যাজিক
(৬ ডিসেম্বর
১৯৯২)
সব যখন ঠিকঠাক চলছে
ঠিক সে সময় পুকুরে
ঢিলটি পড়ল
কেউ লাঠি উঁচিয়ে মারতে এল
কেউ খবর দিতে গেল থানায়
কেউ কেউ জোগাড় করে ফেলল
সমর্থিত লোকলস্কর
সব কিছু বুঝে ওঠার আগেই
আমার হাত কাটা হল
আমার পা কাটা হল
অতঃপর গিলোটিনে চাপিয়ে দেওয়া হল শরীর
আমি হাসতে থাকি
হাসতে হাসতে আমারই দুগালে চুমু খেয়ে ফেলি।
হাত
একটি হাত ঝুলে থাকে দীর্ঘক্ষণ
দড়ি ও সময় বিশেষে ফাঁস হয়ে যায়
তবু আমার হাত আমারই
ময়রা মিষ্টি বানায় ঘিলু চটকে রসের ভিয়েনে
কী বানায় কড়াপাক; লাল নীল সাদা
আয়না
হিমশীতল আয়নার চোখে
এখন আগুন প্রলেপ—
প্রথম দিন আয়না চোখে বিস্ময়
হাসাহাসি
দ্বিতীয় দিন লুকিয়ে চুমু
তৃতীয় দিন থেকে
সেই পুরোনো চুল আঁচড়ানো
আঁচল ঠিক করা
এইরকম বিজ্ঞাপনহীন সংসারে
আয়না আয়না রব মরে যায়
কলম্বাস
ঘণ্টা বাজছিল
যেরকম প্রতিদিন
মীরা নায়ার আমাকে দেখায়
সমালোচকের দাড়ি
প্রতি বৃষ্টি একধরণের চিহ্নস্বর
লাগাম ধরে রাত চেনায়
এই আসে এই যায়
হাল্লাগুল্লা থামে না
শিশুর ছবির ঘামে
নীনা গুপ্তার দাবিযীন সম্পর্ক
মেঘে মেঘে এত বেলা
যতই নড়াচড়া ততই সাপ
ছোট থেকে করমচা পিঠ
ভেতরে ভেতরে
ঘরের বাইরে কেউ যেন যায়
কালরাতে কলম্বাস আবার এসেছে।
জানালার শিক
জানলার শিক
শিকের বাইরে ছাতিম
অংশত ছাতিম বৃক্ষ
দৃষ্টিতে ছাতিম চেহারা
কখনো একটু সোনালি ছু
ঐ তো জলে শচীদুলাল
ঢেউয়ের সঙ্গে ভেসে যাচ্ছে
ভাসমান ঢেউয়ে ছায়া
ছায়ার নখ দাঁত
পুরোনো ফ্রেমের ছবি
চোর কুল
একদিন এই আবছা অন্ধকারে
আঁধারের চুপি চুপি কথা
অনেকটা রেগে যাওয়া মাপ
অপেক্ষার থাকা সুযোগ
অন্ধকার হৃদয়ের কথা জানে
যেভাবে দৃশ্যাবলী তালগোল হয়
বিলাসিতা এই
ঝুপ অন্ধকার নামলে
চোরকুল চোরকুল
বল্কল
ফিরে আসছে রঙের শ্রুতি
পথের মেঠোতা গুড়িয়ে
বায়ের বাইপাশ
বিস্তর ক্যানভাস
এ-হেনা
সু-তরাস অক্ষরে
ছলাৎ ছল
অসময়ে পুরোনো বল্কল
চেরা-চুল
গোল থেকে গোল দর্শ্ন স্বাভাবিক
একটি অস্বাভাবিক ব্যথা চুল চিরতে চিরতে চেরা-চুল।
সৎ
অসৎ
একজন সৎ
মানুষের কাছাকাছি
একজন অসৎ মানুষ
একজন অসৎ মানুষের কাছাকাছি
একজন সৎ মানুষ
মানসিক দ্বন্দ্বের
টানাপোড়েনে বিচ্ছিন্ন
ছবিতা
ঢেউ ঢুকে পড়ছে লেলি হানায়
তা থেকে দু’ফোঁটা
লা
ছবিতা আলো আন
পাল ও আন
তুলিটা বিকেলের বুথে
হে-র...
ছোট বোতাম
বড় বোতাম
চোর কুঠুরি
টুপুস করে নেমে এল রাস্তায়
স্নেহ থেকে স্নেহা
অবিবেচক
রামির পেট থেকে কল্পনা
কেবলই দুঃশাসন
কেবলি সংগোপনে চিৎপুর
নিজস্ব সংবাদদাতা
হাওয়া উড়ছে বাতাসে
বাতাসের গালে টোল
ঠিক দেখেছো তো?
খবর ছিল
সুখে আছে গ্রাম সুখে আছে শহর
শহর হারিয়ে যাচ্ছে
গ্রাম হারিয়ে যাচ্ছে
শব্দের অন্ধকার জুড়ে বাতাসের বাক চাতুরি
কান লম্বা হয় নাক বন্ধ হয় চোখ বুজে যায়।
.....................................................................
সংকলন: অনিন্দ্য রায়
কথা, চরণগুলি অদৃশ্য সুতোয় গাঁথা। অদ্ভুত সুন্দর মাদকতা।
ReplyDelete