বাক্‌ ১৪৮ ।। ফজলুল হকের কবিতা

 

পথ হাঁটবে না

 

প্রফেট হাঁটতেন

পথের কাঁটা চিনে পাতা সরিয়ে

আমরা চিনেছি পথ

না চেনার ভান করে যতবার, পায়ে কাঁটা ফুটে

ততবার ধাঁধায় পড়েছি

 

রবীন্দ্রনাথও পথে নেমেছিলেন

কোথায় গর্ত এবং নর্দমা খুঁজতে খুঁজতে

একদিন বুদ্ধ যীশু এবং মার্কসের

দীর্ঘশ্বাসের মতো ভাবেন

পথের শেষ কোথায়......

এসব গল্প জানে পথ, আরেক জেনেছে ইতিহাস

 

আসলে, ভালোবাসার হাত না বাড়ালে

পথ কোনদিনই আমাদের সাথে হাঁটবে না

 

 

 

 

 

 

 

ধর্মহীন শুধু অন্ধকার

 

গাছের পাতার একপিঠে রোদ

অন্যপিঠে রাত্রি

ঠান্ডা পাথরে পা রেখে আছি নিস্তব্ধতার যাত্রী

 

পা বাড়ালেই

আগে পরে অনেক পায়ের শব্দ

দাঁড়ায়নি কেউ

গাছের পাতারা, কথামুখ এবং চিহ্ন

 

এখনও কথারা মায়ের মতো

জেগে থাকে সারা রাত

সাধ্যসাধনা কথামুখ চিরে চিত্রেমূর্ত

দ্বন্ধ-ধূসরতা-সরণি-শব্দ অভিসম্পাত

 

পথের দুপাশে ধর্মের ভীড়

ডাকিনীর চোখ কার

একটু দূরেই অপমৃত্যু

ধর্মহীন শুধুই অন্ধকার ।।

 

 

 

 

সত্যকাম রঘুনাথ এবং মনসুর

 

মনসুর কি ভাবতেন

রাত ভোর হলে, প্রদূষণবিহীন নীল শীতলক্ষ্যার জলে

বিভ্রান্ত তাপসীর মতো

স্নান সেরে পবিত্র হবে মূর্খ বিদূষক

 

বিদূষক জানতেন

মনসুর-এর বাড়ি নেই জলে লেখা জলের সংসারী

অস্পষ্ট সত্যের সখা, নির্বান্ধব মিথ্যার বিপক্ষে

চিরকাল সত্যের অধিক সত্য তার নাম

সত্যকাম লালনের আরশী নগর প্রতিবেশী

 

জাবাল-সত্যকাম, লালন এবং মনসুর

তাদেরও কি ঘর ছিল ? ছন-খড় গথিক স্থাপত্য

কিংবা লখিন্দরের লোহার বাসর ঘর ?

কালের কোলাজ এই সব মৃত খন্ডহর !

বিদূষক মূর্খ তবু জলের বেপারী

সত্যকাম নৈকট্য সন্ধানে এই জল-জংলার পথে

এখনও সে পঞ্চখন্ডের ক্লান্ত রঘুমণি

 

রঘুনাথ শিরোমণি, সত্যকাম এবং লালন

ক্লান্ত মনসুর-এর বান্ধব

মায়ের মুখের মতো জ্বলজ্বল এইসব প্রিয় মুখ

এবং পদ্মের কলংক নিয়ে বিদূষক

পান্থ চিরদিন

 

কবির নিয়তি

 

প্রচার-দুর্ঘটনায় মারা গেছে কবি, দীর্ঘদিন

তার লাশ ঘিরে আছে

নতনেত্র পাঠক স্থাবক আর মূর্খ সম্পাদক !

 

বেঁচে থেকে জেনেছিল,

জলের অধিক সত্য সাবান বুদ্বুদ

পাঁজরের আড়ালে রোদ বেড়ে

তিলফুলে তিলতিলে পল্লবিত ভীমরুলের চাক;

 

খাসিয়া-জৈন্তা ছুঁয়ে উত্তরের হাওয়া এসে

এখন, কবির মুঠোহাতে তীর্থযাত্রী

কিছু দীর্ণ দূর্বাঘাস এবং মৃত্তিকা

 

No comments:

Post a Comment