বাক্‌ ১৫৮ ।। তমসা অরণ্য

 

"সমস্তই কর্পূর-eat এখন, সমস্ত ধান্যই চিটা"

 

বিজ্ঞপ্তিতে এসেছে, "নিয়োগে চাই- ফেসবুক লাইভ উপস্থাপিকা।"

আসা মাত্রই মফুস্বুলে কিংবা গ্রাম্য বালিকার কৈশোর

ফিকা হতে থাকে।

কর্পোরেট তাকে

তড়াক করে লাফ দিয়ে চড়ে বসে শোপিস মতন,

তরুণীর সুরম্য সৌন্দর্য প্রাসাদ; প্রসাদ!

 

বেতন- আট কী দশ কী বিশ; হাজারে!

বাজারে এর চেয়ে বেশি দরে চামড়া বিকোয় না আজকাল।

 

কী করা চাই তার?

মহিলাদের ড্রেস নিয়া করতে হবে ফেসবুক লাইভ।

ডাইভ দিয়ে দিয়ে কেটে কেটে তুলে আনা চাই

মেদবহুল-টেকো মালদার লাখো কী কোটিপতির

জ্যোতির্ময়ী লক্ষ্মীদেবীর ঘট।

 

যদিও বাংলায় সব হবে, তবু জানা চাই ইংরাজি মধুবোল।

সমস্ত উচ্চে তুলতে

দেওন তো চাই ইংরাজি উচ্চারণে বাংলিশ হাই ফাইভ।

কারণ- সমস্তটাই চলিবে লাইভ।

 

হওয়া চাই- লাইভস্ট্রিমের সঙ্গে পরিচিত, হওয়া চাই স্মার্ট।

দুনিয়া উলটে দেবার আর্ট থাকিবে নখদর্পনে।

এইখানে সীতা নিশিন্দা তিতা,

এইখানে দ্রোপদীর আসন মারান নাই বিদ্রোহের

'যদি' 'কিন্তু' নিয়া,

এইখানে সূর্পণখার তো এক্কেরেই টিক্কা থাকন নাই।

আসতে হবে রাধাভাবে বাঁধা ভাব নিয়া।

 

হে কর্পূর-eat কাঁখ, এইভাবে আআর কত শারীরিক বাঁক

নিয়া বাজাবে রেসিস্ট কলস?

আমার তো সমস্তই অলস; অলস মস্তিষ্ক, মস্তিষ্ক অলস;

সমস্তটাই শয়তানের কারখানা।

অমৃত বাদ দিয়া সবখানে ঘেঁটে দেখি- সুচারু পায়খানা!

 

 

 

"আ রোডট্রিপ ফ্রম স্বরাজ টু সমাজতন্ত্র"

 

 

অন্ধ্রপ্রদেশের মতন আমার রাজধানী আমি রেখেছি বাহিরে।

 

যা কিছু চেয়েছি আমি তারও অধিক দিয়েছি কিছু, দিয়েছি দু মুঠি ভরে।

 

হে আমার হায়দ্রাবাদ, তুমি কেন ভালো নাই? এও কেন শুনিতে পাই আজ?

অরাজক কেউ কি তবে করতেছে উল্লাস তোমার বুকের ওপর

বাজায়ে ডমরুধ্বনি?

 

তোমার স্বরাজ তবে এখনো খোঁজোনি তুমি?

 

জরিপে গিয়েছে জানা, বেঁচে নাকি থাকাই সহজ সবচেয়ে এখানেই।

তবু কেন বিরান চাউনি দিয়া হৃদ করো মরুভূমি? কেউ কি

নিজের করে তোমার আপন নেই?

 

দম দেয়া বিরিয়ানী, মত-পথ-মদিরায় পেরেশানী ভোলো।

 

হে আমার মায়েস্ত্রো, ও আমার কমরেড,

দুই, চার, আট- এইসব বিভেদ বিপরীতে অভেদের নামতায়

বাড়ানোও তো চাই আট দু গুণা ষোলোর জোর!

 

শোর করার আগে মোর মোড়ও ফেরানো চাই।

ধূম্রকাঠির ঠোঁটে নিজের ধোঁয়াই স্বরাজে বিরাজিয়া তোলো।

 

 

"পুরানা প্রেমের গেমওভারনামা"

 

 

পুরানা প্রেমের স্মৃতি আমাদের যেইভাবে ডাকে,

এই ভাবে আমরা সাধারণত দাঁতের চিপায় ঢুকে থাকা

জেদি খাদ্যকণারে খোঁচাইতে থাকি।

এইসব স্মৃতিমন্থনে লাক ঝাঁক মেরে উড়ে যাওয়া

অতিথ পাখি, অতএব লাকি হব সেই সুযোগের বুকে

বরাবরই দুর্যোগের ঘনঘটা।

আমরা ঠিক কয়টা প্রেম করি? কতটা মোহে পড়ি?

বোঁটা ছেঁড়া পাতার মতন বৃক্ষের গাও থিকা

হাওয়ার হাউসে ভেসে নেমে আসি কতটা?

আসলে অপ্রেম নিয়তির গোঁজামেলে ফাঁকি।

পুরানা মানুষের স্মৃতি আমরা সবভাবে মাখি।

সেই মাখানির ভিতর মেঘদূতের চিঠি থাকে,

থাকে রোমিও-জুলেটের সেই সিঁড়ি,

লাইলীর স্পর্শপীড়িত দেওয়াল,

মজনুর তাতে খেয়ালি চুম্বন,

সুনীলের ধ্রুবপদী নিস্পৃহতা,

হিমুর হেমায়িত স্বপ্নজাল

এবং চন্দরার

অপ্রত্যাশিত

চড়!

পুরানা প্রেমের স্মৃতি ঠিক কতদিন তাড়া করে?

যতদিনে একজনের ভালোবাসা হৃদঘরে

উল্টায়া না দেয়, পাল্টায়া না দেয়

সেইসব তাসের বাসর!

 


No comments:

Post a Comment